Saturday 9 July 2016

জগন্না বলরাম শুভদ্রা

জগন্নাথের এমন অসমাপ্ত রূপ কেন ? এইপ্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে কয়েকটি পৌরাণিক কাহিনীর সন্ধান পাওয়া য়ায় । সেগুলির মধ্যে প্রচলিত একটি হল উল্লেখ করা হল । সেকালে মালব দেশের মধ্যবর্তী অবন্তিনগরের রাজা ছিলেন পুন্যবান ইন্দ্রদ্যুম্ন । তিনি ছিলেন শ্রীবিষ্ণুর পরম ভক্ত । ইনিই পুরীর মন্দির প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন । একদিন রাজা সপ্নাদেশ পেলেন, প্রভাতে পুরীর সমুদ্রতীরে চক্রতীর্থে শঙ্খ-চক্র-গদা- পদ্ম শোভিত দারুব্রহ্মের সাক্ষাৎ পাওয়া য়াবে । তার মানে, সমুদ্রের স্রোতে ভেসে আসবে পবিত্র একটি কাঠ । সমুদ্রে ভেসে আসা সেই দারুব্রহ্মকে রাজা যেন ভক্তিভরে মন্দিরে নিয়ে আসেন । তবেই তাঁর মনোবাসনা পূর্ণ হবে । যথাসময়ে রাজা দারুব্রহ্মের সাক্ষাৎ পেলেন এবং তা মন্দিরে নিয়ে এলেন । সেই সময় হঠাৎই এক বৃদ্ধ শিল্পী এসে রাজদরবারে উপস্থিত হলেন । ইনি স্বেচ্ছায় মূর্তি তৈরির দায়িত্ব নিতে চান । এই বৃদ্ধ শিল্পীই যে ছদ্মবেশী বিশ্বকর্মা (মতান্তরে স্বয়ং শ্রীবিষ্ণু )- সেটা রাজা বুঝতে পারেননি । রাজা অপরিচিত এই বৃদ্ধ শিল্পীর হাতে মূর্তি তৈরির দায়িত্ব তুলে দিলেন । কিন্তু বৃদ্ধ শিল্পীর শর্ত মূর্তি তৈরির কাজ শুরু হওয়ার পর একশ দিন অতিক্রম হওয়ার আগে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন দরজা খুলতে পারবেন না, এবং শিল্পী নিজের মনে বন্ধ ঘরে ওই সময় কাজ করবেন । রাজা গভীর আগ্রহে বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন এবং দেখতে দেখতে পনেরদিন অতিক্রন্ত হয়ে গেল । হঠাৎ রাজা লক্ষ্য করলেন, বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে আর কোন শব্দ আসছে না । তিনি রীতিমত অধৈর্য হয়ে পড়লেন । শেষ পর্যন্ত মন্ত্রীদের শত অনুরোধ উপেক্ষা করে জোর করে দরজা খুলে মন্দিরে ঢুকে পড়লেন । কিন্তু কোথায় সেই শিল্পী -তিনি অদৃশ্য । মন্দিরে বিরাজ করছেন তিনটি অসমাপ্ত মূর্তি । এবার রাজা বুঝলেন, ওই শিল্পী স্বয়ং দেবতা ছিলেন । নিজ কৃতকর্মের জন্য তিনিঅনুতাপে ভেঙ্গে পড়লেন । শেষপর্যন্ত অপরাধের শাস্তি হিসাবে আত্মবিসর্জনের দৃঢ় সংকল্প নিলেন । সেই রাতেই তিনি আবার সপ্নাদেশ পেলেন – “আত্মহত্যা মহাপাপ, এটা তোমাকে মানায় না । তুমি ওই তিনটি অসমাপ্ত বিগ্রহকেই যথা নিয়মে পূজা কর ।” সেই থেকেই অসমাপ্ত রূপে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা পুরীতে পূজিত হয়ে আসছেন । . পূর্বে যখন এ রূপে দর্শন দিলেন এমতাবস্থায় সেখানে নারদমুনি উপস্থিত হয়ে সেই রূপ দর্শন করলেন। তখন নারদমুনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিকট প্রার্থনা করলেন, হে ভগবান আমি আপনার যে রূপ দেখলাম, যে ভক্তবিরহে আপনি স্বয়ং বিকারগ্রস্ত হয়ে থাকেন, এই করুণার মূর্তি জগৎবাসীর কাছে প্রকাশ করুন। নারদ মুনির প্রার্থনায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, দারুব্রহ্ম(জগন্নাথ) রূপে শ্রীক্ষেত্রে বা পুরীতে আমি এই রূপে আবির্ভূত হব।

No comments:

Post a Comment